অনলাইন ডেস্ক : বর্তমান সমাজে এইসব ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। নিজের পড়াশোনা বন্ধ করে বাবার জন্য চাষ করছেন মেয়ে। নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বাবার মতই চাষ করছেন তিনি। মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে এই স্বপ্নটা বাবা মা দুজনেরই ছিল, কিন্তু কি এমন ঘটনা ঘটলো যার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েটির নাম জ্যোৎস্না ডোন্ডে। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিকের বাসিন্দা তিনি। ছোট থেকেই জ্যোৎস্না ছিল ভীষণ মেধাবী ছাত্রী। মেয়ে পড়াশোনা করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে এমনটাই আসা করেছিল তার বাবা মা। কিন্তু চাকরি পেয়েও ছেড়ে দিতে হয় তাকে। কারন তার ভাগ্যে বোধহয় চাকরি লেখা ছিল না।
জ্যোৎস্নার বাবা আঙুরের চাষ করতো। মেয়ের যখন ৬ বছর বয়স তখন তার বাবার একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে। পা অকেজো হয়ে পরে। তাদের খুব সাধারন একটি পরিবার। বাব চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য মাকে চাষের হাল ধরতে হয়।
মায়ের হাত ধরে রোজ দুবেলা চাষের জমিতে যেতে শুরু করে জ্যোৎস্না। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে চাষ করতো সে। ২০০৫ সালে তার বাবা অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন, হাঁটতেও শুরু করেন তিনি। তখন জ্যোৎস্না চাষের কাজ ছেড়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেন।
কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশান নিয়ে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু ভাগ্য খুব খারাপ তাই তিনি এগোতে পারলেন না। বন্ধ করে দিতে হল পড়াশোনা। নাসিকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে গাছ বাঁচাতে গিয়ে পা পিচলে পরে সারাজীবনের মত পা অকেজো হয়ে যায় তার বাবার।
মেয়ে তখন একটি সফটওয়ার কম্পানিতে চাকরি করছে। বাবা অকেজো পা নিয়ে শুয়ে শুয়ে সব সময় চিন্তা করে চলেছেন। মেয়ে তখন বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে আবার চাষের কাজ শুরু করে। তারপর থেকে জ্যোৎস্না মন দিয়ে চাষ করতে থাকেন।
আগে যে গাছে একটি শাখায় ১৫ থেকে ১৭ টা আঙুর ফলত, সেখানে এখন ২৫ থেকে ৩০ টা আঙুর হয়। ২০১৮ সালে ভারতে ‘কৃষিথন বেস্ট ওম্যান ফার্মার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন জ্যোৎস্না। বাবার মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে বাবার স্বপ্নকে সফল করেছেন তিনি।
এভাবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাষের মাঠে সোনা ফলাচ্ছেন এই তরুণী।